“শ্যামর হৃদয়বিহারিণী”
কাজল নদীর ছায়া পড়ে কালো হরিণ-আঁখির তারায়—
রাই ছোঁয়ায় হিঙুল্ আঙুল যমুনার ঐ শীতল ধারায়।
গোপবালারা কলসি ডুবায় ছিটায় বারি খেলার ছলে,
গোঠের পথে ছোটে বাছুর, রাখালরা যায় কোলাহলে।
ভ্রমর ওড়ে খোঁপার ফুলে, কাজল নদীয় সিনান্-কুলে
অস্তবরির শেষ আলোতে তরুণ হিয়া উঠল দুলে—
গোধন-গিরির পায়ের কাছে আঁধার ঢাকে গোখুর-রেণু
সে পথ ধরে আঁধার মুখে সবার শেষে বাজিয়ে বেণু
মোরপঙ্খ উড়ায়ে চলে আঁধার দেশের রাজার মত
দুঃখ তার তিলক-রেখা, মণিহার তীরফলার ক্ষত।
হিম-ছোঁয়ানো নদীর জলের সাবলীল ছলাৎছলে
ফিরায়ে আঁখি দেখল রাখায়, ভাসল কলস বানের জলে
অভঙ্গে রাই রইল চেয়ে অস্তরবির রক্তরাগে
গাছের ছায়ার গুণ্ঠনে তার সাদা ললাট আঁধার লাগে।
দৃঢ় চিবুক কপোলতলে লাগল তাহার রঙের ছোঁয়া
অপলক শ্যাম, কুঞ্চিত ভ্রু সরল হল আলোয় ধোয়া।
যুদ্ধনীতির কল্পনা তার ভাসল সুধার সঙ্গীতে
দধীচির হাড় ভাঙল বুঝি অপ্সরা-নাচ-ভঙ্গিতে।
অমরাবতী নামল ধরায়, মেঘমুলুকে ডুব্ল রবি
শ্যামের চোখে রইল লেগে কাজল-স্নাতা রাইয়ের ছবি॥
ভালে রাধার সিঁদুররেখা ঢাকে তাহার চূর্ণ-চুলে,
ভাসিয়ে কুল ভুলের বানে চরণ টানে নদীর কুলে।
একাকী শ্যাম রাত্রি জাগে ভবিষ্যতের রণোদ্যমে,
সুদূর দেশে পাড়ি দেবার ইচ্ছা তার ডুব-মরমে।
ঘাসের ঘুম ভাঙে ছোঁয়ায়, শিশির ধোয়ায় রাধার চরণ—
কাঁটা বেঁধা মর্মমাঝে, পায়ের পাতায় রক্তক্ষরণ।
সখী-দুইটি প্রহরিণী, বংশীবটের কোন্ এক ফাঁকে—
দেবদূতের মতো কানাই— অবাক্ হয়ে দেখছে তাকে।
ও বুঝি রে মানব-বালক নয় কখনো ধুলার ধরায়,
আধ্-চাঁদনির গোলকধামের সুরধুনীর এ-নির্ঝরায়।
সখী কাঁদে, রাইয়ের পরাণ কেঁদে ওঠে চুপ্-বেদনে—
আঁধার ঘরের নিবিড় পায়েল শেষবারটি পড়ে মনে।
পায়েল নয়— সে যে তাহার বাঁধা বেড়ি সোনার শিকল;
স্বপন-আঁখি কঠোর-চিবুক কৃষ্ণ তায় করলে বিকল।
পায়ের বেড়ি ফেললে ছিঁড়ি গুণ্ঠিতা বৌ হ্যাঁচ্কা টানে,
ধেয়ানী শ্যামের আঁখি রাধায় বিঁধল মর্মভেদী বাণে॥
মৃণালবাহু ঘিরলে শ্যামের তৃষ্ণার্ত কণ্ঠ নীল,
শিখিপাখার চূড়া-খোলা কৃষ্ণ কেশের বাঁধন-খিল
ভেঙে বুঝি আদিম রাহু ঢাকল রাধার শ্বেত-কপোলে;
মেঘ চাদরে শয্যা ঢেকে রোহিণী-চাঁদ পড়ল ঢ’লে॥
কানাই মোদের ব্যস্ত ছিল ভবিষ্যতের কল্পনাতে—
ভগবদ্গীত সাম্যবাদে বাঁধতে ছন্নছাড়া এ-জাতে।
রক্তস্নানের মত্ততাতে আন্তে ধরায় শ্বেতাম্বুজা—
তাহার মত আবির্ভাবে কী ভাবে তা কি যায় বুঝা।
বালকচিতের আল্সেমিতে মিলিয়ে যেত হয়ত ধীরে,
হয়ত সে-সংকল্পখানি মিলত গিয়ে সিন্ধুতীরে।
ধনুক-ভাঙা অঙ্গীকারে হলাহলের হল চালিয়ে
কাঁপবে না তার পলক; মরণপণ সে-পথে বাধ খালি এ।
কেন, রাণি, বাড়িয়ে বাহু— প্রেমের সুধা বক্ষহারে—
দাঁড়াতে গেলি উদ্যত ঐ কপিধ্বজের পথ-কিনারে।
কালের চাকার ঘূর্ণী পথে তুই অবলা রুধবি নাকি?
বোকা মেয়ে, ভল্লধারী বাহুর পেশীর সয় কি রাখী॥
তবু আমার রাখাল-ছেলে গোপবালার প্রেমের নীরে
ডুবেছে বুক-ভার-করা তার বিপ্লবের ঐ স্বপ্ন ছিঁড়ে।
দেখেছি তায় বিব্রত, হায়, ললাটরেখায় কুহেলিকা—
প্রেমের শীতল ফুঁ-তে মলিন স্বভাব-রাঙা অগ্নিশিখা।
বাঁশীর হৃদয়-মুচ্ড়ানো সুর নয় রে, রাই, কেবল প্রীতির—
আমার শ্যামের বক্ষ-জোড়া মনচোরা ঐ হৃদয়রীতির
মধ্যে আছে সকল ধরার মানবতার কাঁদন মিশে,
শ্মশানচিতার হাহাকারে কৃষ্ণ আমার হারায় দিশে।
কালিদহের গরল তাহার চরণতলে হেলায় ভোলা,
‘ত্রাহি মাধব’ কাঁদলে কেহ গগনলোকে দেয় তা দোলা।
গোঠের ধেনু, শাখার পাখি, কাঠবিড়ালীর কোমল পিঠে
ছেয়ে আছে মোর শ্যামের আদর, বংশীবটের গন্ধে মিঠে।
শুধু কি, রাই— মানবী, তোর দাবী তাহার দিঠির পরে;
আমার শ্যামের চক্ষে ভাসে নরক-অসুর দেশান্তরে।
মা-যশোদার নয়ন মুছে যে-কৃষ্ণ কাল যাবেই চলে
শুধু সে-বুকভার বাড়ালি রাধা তাহার বক্ষে ঢ’লে।
দেখেছি তায়— কেঁদেছে সে যমুনা-নীল অন্ধকারে
যখন তুই ঘুমিয়ে ছিলি নিবিয়ে জগৎ বন্ধ দ্বারে;
কলস-কানায় ছল্কে বারি শুকিয়েছিল পথের ধুলায়
আট প্রহরে পাওনা ঘরের মিটিয়ে পরকীয়া কি কুলায়?
অকাজের ঐ আল্সেমিতে, সম্ভাবনা-হীন প্রণয়ে
চেতন-মনের তীক্ষ্ণতা তার শাঁখা-আঁচড়ে যাচ্ছিল ক্ষয়ে—
অবুঝ বালার পুতুলখেলার মেলা হ’তে গুটিয়ে নিয়ে
আপনাকে, তার বাহুর বাঁধের জোর না পেয়ে কাঙ্ক্ষী হিয়ে’,
খেলার মধ্যে না ঢেলে তার ললাটরেখার সম্ভাবনা—
তার পক্ষে চলত কি আর বিবাহিতার প্রলাপ শোনা?
ভবিষ্যতের দায়িত্ব যার ভবিষ্যহীন ছলনাতে
ডুবতে বসে হারিয়েছিল আপনাকে সে রাসের রাতে।
ঘরে-বারে দিবস-রাতি কাটিয়েছিলি মদির প্রেমে।
দিনের বেণুর আলস্যতে, রাত্রে দুঃস্বপ্নে ঘেমে
স্বভাব-যোদ্ধা স্বভাব-প্রেমিক প্রেমের তরে না লড়তে পেয়ে
কেমনে শ্বাস ছিল রুধি, ব্রজ-অরণ্যে ধেয়ে ধেয়ে।
অমরাবতী নির্বাসিত দেবদূতের শূন্য বুকে
যে-অপ্সরার কাঁকন-হেনার চিহ্ন, সে ঘর করছে সুখে।
হয়ত তার গোবর্ধনের পথটি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে
পৌঁছাত এক নতুন ভোরে রণনীতির অক্ষ কষতে।
হয়ত সেই সহজ পথে হারাত না সহজ রাখাল—
চক্র ছেড়ে কখনো বা গোপবালার বাঁধত কাঁকাল
চারু বাহুর বেষ্টনে আর শোনাত তার অধর-ছোঁয়া
বেণুর গীতি— যেত না তা সময়-মরুর ধুলায় খোয়া।
সঙ্গীতে তার মুখর হয়ে উঠত গভীর ঐশী বাণী,
হয়ত তার ঘরের কোণে ষোলোটি নয়— একটি রাণী।
কিন্তু, রাধা, পথের মাঝে মৃণালভুজ-রহস্য রচি’
অভ্যাসীর ঐ কৃপাণ-’পরে পুষ্পমালা দিলি গো খচি’।
সংকল্পের খেই হারাল আমার শ্যাম দৃঢ়চেতা,
শূন্যতারই ছলনাতে সে রইবে বুঝি বাঁধা হেথা?
রাইয়ের কাঁদন সজল চোখে দেখ্ছে কতযুগের চারণ;
কাঁদেনি শ্যাম, ভোলে নি পিয়ে প্রিয়া-অধর-সুধার কারণ।
খেলাঘরের হাওয়ামহল ধুয়ে দিয়ে কাজল জলে
বাঁশির সুর মিলিয়ে দিয়ে যমুনার ঐ ছলাৎছলে—
শ্যাম আমার মিলিয়ে গেছে দিগন্তরের অস্তরাগে—
আপন বেদন বক্ষে চেপে, ধরণী-মা’র ঘুম-সোহাগে॥
রাই ছোঁয়ায় হিঙুল্ আঙুল যমুনার ঐ শীতল ধারায়।
গোপবালারা কলসি ডুবায় ছিটায় বারি খেলার ছলে,
গোঠের পথে ছোটে বাছুর, রাখালরা যায় কোলাহলে।
ভ্রমর ওড়ে খোঁপার ফুলে, কাজল নদীয় সিনান্-কুলে
অস্তবরির শেষ আলোতে তরুণ হিয়া উঠল দুলে—
গোধন-গিরির পায়ের কাছে আঁধার ঢাকে গোখুর-রেণু
সে পথ ধরে আঁধার মুখে সবার শেষে বাজিয়ে বেণু
মোরপঙ্খ উড়ায়ে চলে আঁধার দেশের রাজার মত
দুঃখ তার তিলক-রেখা, মণিহার তীরফলার ক্ষত।
হিম-ছোঁয়ানো নদীর জলের সাবলীল ছলাৎছলে
ফিরায়ে আঁখি দেখল রাখায়, ভাসল কলস বানের জলে
অভঙ্গে রাই রইল চেয়ে অস্তরবির রক্তরাগে
গাছের ছায়ার গুণ্ঠনে তার সাদা ললাট আঁধার লাগে।
দৃঢ় চিবুক কপোলতলে লাগল তাহার রঙের ছোঁয়া
অপলক শ্যাম, কুঞ্চিত ভ্রু সরল হল আলোয় ধোয়া।
যুদ্ধনীতির কল্পনা তার ভাসল সুধার সঙ্গীতে
দধীচির হাড় ভাঙল বুঝি অপ্সরা-নাচ-ভঙ্গিতে।
অমরাবতী নামল ধরায়, মেঘমুলুকে ডুব্ল রবি
শ্যামের চোখে রইল লেগে কাজল-স্নাতা রাইয়ের ছবি॥
ভালে রাধার সিঁদুররেখা ঢাকে তাহার চূর্ণ-চুলে,
ভাসিয়ে কুল ভুলের বানে চরণ টানে নদীর কুলে।
একাকী শ্যাম রাত্রি জাগে ভবিষ্যতের রণোদ্যমে,
সুদূর দেশে পাড়ি দেবার ইচ্ছা তার ডুব-মরমে।
ঘাসের ঘুম ভাঙে ছোঁয়ায়, শিশির ধোয়ায় রাধার চরণ—
কাঁটা বেঁধা মর্মমাঝে, পায়ের পাতায় রক্তক্ষরণ।
সখী-দুইটি প্রহরিণী, বংশীবটের কোন্ এক ফাঁকে—
দেবদূতের মতো কানাই— অবাক্ হয়ে দেখছে তাকে।
ও বুঝি রে মানব-বালক নয় কখনো ধুলার ধরায়,
আধ্-চাঁদনির গোলকধামের সুরধুনীর এ-নির্ঝরায়।
সখী কাঁদে, রাইয়ের পরাণ কেঁদে ওঠে চুপ্-বেদনে—
আঁধার ঘরের নিবিড় পায়েল শেষবারটি পড়ে মনে।
পায়েল নয়— সে যে তাহার বাঁধা বেড়ি সোনার শিকল;
স্বপন-আঁখি কঠোর-চিবুক কৃষ্ণ তায় করলে বিকল।
পায়ের বেড়ি ফেললে ছিঁড়ি গুণ্ঠিতা বৌ হ্যাঁচ্কা টানে,
ধেয়ানী শ্যামের আঁখি রাধায় বিঁধল মর্মভেদী বাণে॥
মৃণালবাহু ঘিরলে শ্যামের তৃষ্ণার্ত কণ্ঠ নীল,
শিখিপাখার চূড়া-খোলা কৃষ্ণ কেশের বাঁধন-খিল
ভেঙে বুঝি আদিম রাহু ঢাকল রাধার শ্বেত-কপোলে;
মেঘ চাদরে শয্যা ঢেকে রোহিণী-চাঁদ পড়ল ঢ’লে॥
কানাই মোদের ব্যস্ত ছিল ভবিষ্যতের কল্পনাতে—
ভগবদ্গীত সাম্যবাদে বাঁধতে ছন্নছাড়া এ-জাতে।
রক্তস্নানের মত্ততাতে আন্তে ধরায় শ্বেতাম্বুজা—
তাহার মত আবির্ভাবে কী ভাবে তা কি যায় বুঝা।
বালকচিতের আল্সেমিতে মিলিয়ে যেত হয়ত ধীরে,
হয়ত সে-সংকল্পখানি মিলত গিয়ে সিন্ধুতীরে।
ধনুক-ভাঙা অঙ্গীকারে হলাহলের হল চালিয়ে
কাঁপবে না তার পলক; মরণপণ সে-পথে বাধ খালি এ।
কেন, রাণি, বাড়িয়ে বাহু— প্রেমের সুধা বক্ষহারে—
দাঁড়াতে গেলি উদ্যত ঐ কপিধ্বজের পথ-কিনারে।
কালের চাকার ঘূর্ণী পথে তুই অবলা রুধবি নাকি?
বোকা মেয়ে, ভল্লধারী বাহুর পেশীর সয় কি রাখী॥
তবু আমার রাখাল-ছেলে গোপবালার প্রেমের নীরে
ডুবেছে বুক-ভার-করা তার বিপ্লবের ঐ স্বপ্ন ছিঁড়ে।
দেখেছি তায় বিব্রত, হায়, ললাটরেখায় কুহেলিকা—
প্রেমের শীতল ফুঁ-তে মলিন স্বভাব-রাঙা অগ্নিশিখা।
বাঁশীর হৃদয়-মুচ্ড়ানো সুর নয় রে, রাই, কেবল প্রীতির—
আমার শ্যামের বক্ষ-জোড়া মনচোরা ঐ হৃদয়রীতির
মধ্যে আছে সকল ধরার মানবতার কাঁদন মিশে,
শ্মশানচিতার হাহাকারে কৃষ্ণ আমার হারায় দিশে।
কালিদহের গরল তাহার চরণতলে হেলায় ভোলা,
‘ত্রাহি মাধব’ কাঁদলে কেহ গগনলোকে দেয় তা দোলা।
গোঠের ধেনু, শাখার পাখি, কাঠবিড়ালীর কোমল পিঠে
ছেয়ে আছে মোর শ্যামের আদর, বংশীবটের গন্ধে মিঠে।
শুধু কি, রাই— মানবী, তোর দাবী তাহার দিঠির পরে;
আমার শ্যামের চক্ষে ভাসে নরক-অসুর দেশান্তরে।
মা-যশোদার নয়ন মুছে যে-কৃষ্ণ কাল যাবেই চলে
শুধু সে-বুকভার বাড়ালি রাধা তাহার বক্ষে ঢ’লে।
দেখেছি তায়— কেঁদেছে সে যমুনা-নীল অন্ধকারে
যখন তুই ঘুমিয়ে ছিলি নিবিয়ে জগৎ বন্ধ দ্বারে;
কলস-কানায় ছল্কে বারি শুকিয়েছিল পথের ধুলায়
আট প্রহরে পাওনা ঘরের মিটিয়ে পরকীয়া কি কুলায়?
অকাজের ঐ আল্সেমিতে, সম্ভাবনা-হীন প্রণয়ে
চেতন-মনের তীক্ষ্ণতা তার শাঁখা-আঁচড়ে যাচ্ছিল ক্ষয়ে—
অবুঝ বালার পুতুলখেলার মেলা হ’তে গুটিয়ে নিয়ে
আপনাকে, তার বাহুর বাঁধের জোর না পেয়ে কাঙ্ক্ষী হিয়ে’,
খেলার মধ্যে না ঢেলে তার ললাটরেখার সম্ভাবনা—
তার পক্ষে চলত কি আর বিবাহিতার প্রলাপ শোনা?
ভবিষ্যতের দায়িত্ব যার ভবিষ্যহীন ছলনাতে
ডুবতে বসে হারিয়েছিল আপনাকে সে রাসের রাতে।
ঘরে-বারে দিবস-রাতি কাটিয়েছিলি মদির প্রেমে।
দিনের বেণুর আলস্যতে, রাত্রে দুঃস্বপ্নে ঘেমে
স্বভাব-যোদ্ধা স্বভাব-প্রেমিক প্রেমের তরে না লড়তে পেয়ে
কেমনে শ্বাস ছিল রুধি, ব্রজ-অরণ্যে ধেয়ে ধেয়ে।
অমরাবতী নির্বাসিত দেবদূতের শূন্য বুকে
যে-অপ্সরার কাঁকন-হেনার চিহ্ন, সে ঘর করছে সুখে।
হয়ত তার গোবর্ধনের পথটি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে
পৌঁছাত এক নতুন ভোরে রণনীতির অক্ষ কষতে।
হয়ত সেই সহজ পথে হারাত না সহজ রাখাল—
চক্র ছেড়ে কখনো বা গোপবালার বাঁধত কাঁকাল
চারু বাহুর বেষ্টনে আর শোনাত তার অধর-ছোঁয়া
বেণুর গীতি— যেত না তা সময়-মরুর ধুলায় খোয়া।
সঙ্গীতে তার মুখর হয়ে উঠত গভীর ঐশী বাণী,
হয়ত তার ঘরের কোণে ষোলোটি নয়— একটি রাণী।
কিন্তু, রাধা, পথের মাঝে মৃণালভুজ-রহস্য রচি’
অভ্যাসীর ঐ কৃপাণ-’পরে পুষ্পমালা দিলি গো খচি’।
সংকল্পের খেই হারাল আমার শ্যাম দৃঢ়চেতা,
শূন্যতারই ছলনাতে সে রইবে বুঝি বাঁধা হেথা?
রাইয়ের কাঁদন সজল চোখে দেখ্ছে কতযুগের চারণ;
কাঁদেনি শ্যাম, ভোলে নি পিয়ে প্রিয়া-অধর-সুধার কারণ।
খেলাঘরের হাওয়ামহল ধুয়ে দিয়ে কাজল জলে
বাঁশির সুর মিলিয়ে দিয়ে যমুনার ঐ ছলাৎছলে—
শ্যাম আমার মিলিয়ে গেছে দিগন্তরের অস্তরাগে—
আপন বেদন বক্ষে চেপে, ধরণী-মা’র ঘুম-সোহাগে॥
Comments
Post a Comment