“সাগর যাহার বন্দনা রচে”: মধ্যযুগে বাংলা পদ্যসাহিত্যের বিবর্তন
[এই লেখাটা গপ্পোবাগীশ প্রকাশনীর মালিক অনুরোধ করেন লিখতে। কিন্তু লেখা দেবার পরে, এবং গত দুই-মাসে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা না তো বইটার কোনো ডিটেলস্ পাঠান, না অথরস্ কপি— আর না লেখকের প্রতি সামান্যতম সৌজন্য দেখাবার প্রয়োজন বোধ করেন। বইপাড়ায় এত খারাপ অভিজ্ঞতা আমার আগে হয়নি। লেখাটা তাই এখানে তুলে রাখলাম।]
‘কথার মাহাত্ম্যকে তুমি অস্বীকার করছ, বন্যা?’ অবাক হয়েছিলেন প্রবীণ রবীন্দ্রনাথের পিতৃদ্রোহী মানসপুত্র অমিট্রায়ে [১]। আদ্যিকাল হতে মানুষ তার হৃদয়ের আবেগকে মূর্ত করে তুলেছে ভাষায়; যেই আদিম মানবী কোলের শিশুকে সরল আনসফিস্টিকেটেড্ ঘুমপাড়ানি গানের গুনগুনানি শুনিয়েছিলেন— বাকী জগতের থেকে বিচ্ছিন্ন মা-ছেলের অবচেতনের অন্তঃপুরে— তাঁর সেই ‘আধেক হৃদয় ঋণ’ গেঁথে গিয়েছিল কাঁচা বয়সের মানবতার মনে। বহির্বিশ্বের নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব যখন তাকে হতাশ করেছে, তখন অন্তর্মুখী হয়েছে সে সেই অব্যক্ত আবেগের উৎসের পানে, সেই দুখ-জাগানিয়ার নয়নের পানে। তারপরে, ক্রৌঞ্চবিরহী কবি তমসার তীরে উচ্চারণ করলেন সেই বাণী, বেদভাষা যাতে গান হ’য়ে উঠল [২]। তখনও লেখনীর চল হয়নি।
ফরমায়েশি লেখা আমার আসে না, ওসব ঝামেলার মধ্যে আমি সচরাচর জড়াই না। একটা প্রকাশনীর মালিক আমার কলেজের সহপাঠী ছিলেন; তিনি জবরদস্তি লেখালেন। আমি বললাম, ‘বেশ, তবে আমার বাংলা কবিতার নির্ঘণ্ট রবীন্দ্রনাথে এসে শেষ হবে।’ তাতে সে আঁত্কে উঠল। তাকে দোষ দিতে পারি না; সাধারণতঃ, রবীন্দ্রনাথের কথ্য ভাষা হিসাবে চলিত বাংলার সংজ্ঞা নিরূপণ করলে মিথ্যা বলা যায় না। আরো অনেকের মতোই সে মনে করত যে রবীন্দ্রনাথেই আধুনিক বাংলা ভাষার শুরু। অথচ, সহস্রাব্দের ঊষালগ্নে আমরা দেখেছি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রাকৃতভাষায় পদ্য রচনা করতে [৩]; জয়দেব আর বড়ূ চণ্ডীদাসের গীতিকাব্যের আঙ্গিকের কোনো পার্থক্য নেই। প্রাকৃতভাষা তাঁর দৌড় হবার অপরাধে যে ‘কুমারসম্ভবের কবি’ রাজকন্যার পতিত্বের মর্যাদা পান্নি, তাঁর ক্লাসিক্যাল্ যুগ তখন ছিল বিগত। আর আধুনিকতা? সে তো শুনেছি অনাবিলভাবে মানুষের সুখ-দুঃখকে যে যত সংস্কারহীন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে, সে তত আধুনিক।
একদিন ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে এক রুদ্ধ প্রাঙ্গণের মধ্যে আবালবৃদ্ধবনিতা ভারতীয়দের সমাবেশের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল এক ইংরাজ ব্রিগেডিয়ার। গুজরাটের গান্ধী তখন সদ্য আফ্রিকা থেকে ফিরে পায়ের তলায় জুতসই মাটি খুঁজছেন। বাংলার দেশবন্ধুও সংবাদপত্রের ও প্রতিবাদ-কর্মসূচীর ওপর শাসকের নিষেধাজ্ঞাকে অতিক্রম করে তাঁর পলিটিক্যাল সাঁ-ফ্রোঁয়া ভাঙবেন কিনা বুঝে উঠতে পারেননি। রুদ্ধগর্জনে এক বাঙালী কবি সেদিন স্টেটস্ম্যানের মাধ্যমে লর্ড কেমস্ফোর্ডকে চিঠিতে যা লিখেছিলেন, তার মর্মার্থ— ‘তোমাদের সারস্বত সভার সদস্যতা থেকে আমায় মুক্তি দাও। জালিয়াঁওয়ালাবাগের স্লটারহাউজে আমার আনপড় দেশবাসীর দুঃখ-দুর্ভাগ্য আমি ভাগ করে নিই।’ বাল্মীকি উত্তরকাণ্ডে রাজা শ্রীরামকে যে-ভাষায় ভর্ৎসনা করেছিলেন, প্রাকৃতভাষায় তার আক্ষরিক রূপান্তর বুদ্ধিমান অনুবাদকমাত্রই এড়িয়ে গেছেন। বাণভট্ট ‘হর্ষচরিতে’ শাসকচরিত্রের নঞার্থক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি-আকর্ষণ করে হর্ষবর্ধনের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন [৪]। শরদিন্দুর কল্পনায় ‘কুমারসম্ভবের কবি’ রাজ-অনুগ্রহ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘আমি যেন চিরকাল আমার চিরসুন্দর চিরনগ্ন মহাকালের উপাসনায় মগ্ন থাকতে পারি।’ সত্য শিব সুন্দরের প্রতি সেই দৃঢ় দায়িত্ববোধ শেষ দেখেছিলুম রবীন্দ্রনাথের জীবনীতে। ১৯৯০এর অক্টোবরে অনতিদূর অযোধ্যায় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে মাথা ঠেকাতে আসা নিরস্ত্র অসহায় তরুণ শ্রীরাম-উপাসকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল সমাজবাদী পার্টির সরকারের পুলিশ [৫]— তখন বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা আশ্চর্য আত্মসংযমে নীরব ছিলেন, যেন এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাঁরা ন্যায়বিচারের দাবী করেননি, কেউ-কেউ তো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন। বাংলাভাষার কবিদের চর্বিতচর্বণ ঘেঁটে এত মারাত্মক সমসাময়িক ঘটনাটির কোনো দলিল পাওয়া যাবে না। যারা কণ্ঠ বিকায় নি, আঁতেলেকচ্যুয়ালরা তাদের বলে সাম্প্রদায়িক। তা, সেই মেরুদণ্ডহীন প্রজন্মের কাছে বাক্চাতুর্য আশা করতে পারি সভায়-সমিতিতে ‘আনন্দে’-নিরানন্দে সুর-কাটা-প্রোপ্যাগ্যাণ্ডায়— কিন্তু কবিতা আশা করতে পারি না। আমার মাতৃভাষার শেষ মহৎ কবি রবীন্দ্রনাথ, যাঁর একদিন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় কণ্ঠ রুদ্ধ হয়েছিল, ‘বাঁশি সঙ্গীতহারা’— অপ্রিয় পরিস্থিতির ইনকনভেনিয়েন্স এড়াতে সুবিধা হবে বলে যিনি নির্লজ্জের মত শবযাত্রার পটভূমিতে ফরমায়েশি মধুররস কপচাতে পারেননি।
অগত্যা সেই প্রকাশক ঈশপের গল্পের সেই চরিত্রটির মত, ‘দ্রাক্ষাফল অতিশয় টক’-এর সুরে ‘বেশ তো, কণ্ট্রোভার্সি হবে, মন্দ কী’ বলে আমার বক্তব্যে রাজী হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্তই। চুলোয় যাক্ বইয়ের বিষয়। একটা প্রজন্মের ওপর তার আগের প্রজন্মের সাহিত্যের যে প্রভাব থাকে, ভাষায় চলমানতার বাহক তাই-ই। সেই বহমানতা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। আমরা তার মধ্যেই একটা অকিঞ্চিৎকর ধাপ মাত্র।
আমি মধ্য ভারতের একটা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করি। ছুটি নিয়ে বইমেলার সময়ে এলাম, দিন তিনেক থাকলাম। তার মধ্যে বই এল না, প্রকাশক বলল ছাপা শেষ হয়নি। আমি লেখা প্রকাশের জন্য টাকা চাইনি; কিন্তু সামান্য একটা অথরস্ কপি দেবার মত ভদ্রতা এই প্রকাশক দেখাল না। প্রতিদিনই সে ‘আজ পাঠাব, কাল পাঠাব’ করে ফেব্রুয়ারি মাসটা কাটিয়ে দিল। আমি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘লেখাটা যে ছেপেছ তার কিছু প্রমাণ দাও— নইলে আমি লেখাটা অন্য কোথাও পাঠাব।’ সে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে বলল, ‘তোমার লেখা মনোনীত হয়েছে এই তোমার ভাগ্য ভাল!’ (অথচ সে লেখাটা রীতিমত চেয়েচিন্তে নিয়েছিল— আমন্ত্রিত লেখা বললেও কম বলা হয়। আমি এরকম গুড্-ফর-নাথিং প্রকাশনীর কাছে মনোনয়নের জন্য লেখা কেন দেব? আমি ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম নবেম্বর মাসে, একটা ইন্সটিট্যুট ছেড়ে আরেকটায় জয়েন করছি, সেখানে কাজের প্রচণ্ড চাপ। আমি প্রথমে লিখে রাজিই হইনি। সে রীতিমত জোর করে লেখায়, কলেজের বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে। আমার আর একটু খোঁজ-খবর নিয়ে লেখা দেয়া উচিত ছিল, কোন্ সংকলন, কারা লিখছেন ইত্যাদি। সে-সবেরও সময় পাইনি।) এবং বলে, ‘ছাপলে ছেপেছি, না ছাপলে না ছেপেছি। অথরস্ কপি দেব না। তুমি ধরে নাও তোমার লেখা আমরা ছাপিনি। লেখকের প্রতি প্রকাশকের কোনো দায় নেই। যা করবে করে নাও।’
আমি জানি না, সেই লেখাটা ছেপেছে, ছাপ্লে কোথায় ছেপেছে বা কার নামে ছেপেছে। আমার অত্যন্ত বিরক্ত লাগল, আর আমি ঠিক করলাম যে আমার লেখাটা আমি আমার ব্লগে তুলে রাখব। এটা পড়বার জন্য কেউ যাতে ওর বইটা না কেনে। কিন্তু লেখাটা যদি ছেপে থাকে (তারই সম্ভাবনা বেশী) আমি তাহলে এটা অন্যত্র পাঠাতে পারি না, কোনো পত্রিকায় বা বইতে। তাই এখানে, ব্লগটা আমার নিজের।
মরুদস্যুর ঘোড়ার খুরে একদিন ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে উঠেছিল ঝড়, সেদিন বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষ ‘বোধিপথপ্রদীপে’র শিখাটিকে যত্নে বাঁচিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তিব্বতে। নালন্দাকে আবৃত করা অগ্নিশিখায় ছাই হয়ে গেল গুপ্ত হরফে লেখা পাণ্ডুলিপিগুলো— বৌদ্ধ ও সনাতন শাস্ত্রের যুগান্তরের বিবর্তন ফিনিক্স পাখির মতো আশ্চর্য নবরূপ পরিগ্রহ করল। এক প্রদেশের সঙ্গে অন্য প্রদেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান গেল বন্ধ হয়ে। সেই অন্ধযুগের অন্ধকূপে প্রাদেশিক ভাষাগুলি জন্ম নিল কথ্য ভাষার ছাঁচে। সংস্কৃত বা পালি— পূর্বের দুই দফতরি ভাষার ধ্বসা ইমারতের আনাচে-কানাচে, ফার্সীর শান্-বাঁধানো মর্মরফলকের থেকে সচেতন দূরত্ব রেখে, নালন্দা-বিক্রামশীল-রাঙামাটির ধ্বংসস্তূপের ঘুলঘুলি-কার্ণিশের গা বেয়ে, তৈরী হল যত্নহীন বটের চারার মতো বাংলা ভাষা। সেই যুগে জয়দেব লিখেছিলেন, ‘কেশব ধৃত বুদ্ধশরীর।’ [৬]
জয়দেব আর শঙ্করাচার্যের ভাষাকে ঠিক সংস্কৃত বলা উচিত নয়। তাঁদের ভাষায়— পাণিনীয় ব্যাকরণকে অক্ষুণ্ণ রেখে— নিশ্চয়ই তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন ভারতবর্ষীয় প্রাগ্যবন ভাষাগুলির মধ্যে সমণ্বয়সাধন করতে। বুঝিয়ে বলি। সেই সব ভাষায় ব্যবহার্য শব্দগুলির পরস্পরচ্ছিন্ন সমষ্টি নিয়ে— যে সব বিশেষ্যপদ সংস্কৃত ব্যাকরণের বিশেষ পরিচয় ছাড়াই গড়া এবং ভেঙে বোঝা যায়— তাদের দ্বারা অত্যধিক সুখপাঠ্য অসামান্য ছন্দোবহ পদ্য তৈরী করে তাঁরা সেই ভাষাকে (কিছুটা ধর্মগত রাষ্ট্রভাষার মত করে) জনপ্রিয় করে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রাকৃত ভাষায় তখন অনর্গল বিদেশী শব্দ ঢুকে পড়ছে— চাপিয়ে দেওয়া, বাজার-ব্যবহারে, দরবারী প্রয়োজনে, আঁতলামিতে (সাংস্কৃতিক ‘লিবেরাল’ সম্প্রদায় চিরকালই ছিল), অনুকরণে, অটল বিপরীত সম্প্রদায়ের সঙ্গে উদার হিন্দুর মানিয়ে নেওয়ায়, বা ধর্মান্তরণে— যে প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে খসরো লিখবেন, উর্দু আর জেমস্ লঙের পরিভাষায় যা ‘মুসলমানী বাংলা’ [৭]— প্রায় মূল ভাষাস্রোত থেকে হয়ে পড়বে বিচ্ছিন্ন, এমনকী তুলসীদাসের রামপাঁচালীতে ঢুকে পড়বে গুচ্ছের আরবী-ফার্সী শব্দ। সেই পরিস্থিতির পূর্বানুধাবনে হয়ত তাঁরা হিন্দু মৌখিক বুলির ও কাব্যসাহিত্যের জাত বাঁচাবার চেষ্টাতেই বা— ঐ লেখাতে মন দিয়েছিলেন। রম্যকপর্দিনী শৈলসুতার স্তোত্র যেমন শঙ্করের [৮], তেমনই ত্রিভূবনভবননিধানের অনৈসর্গিক অভিব্যক্তি [৯] রোম্যাণ্টিক লিরিসিস্ট্ জয়দেবের স্বভাববহার্ভূত ছিল। একথা তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়— এই সর্বব্যাপী সাহিত্যনির্মাণের শ্রম তাঁরা (এবং হয়ত তাঁদের মত আরো অনেকে) একটা ভাষাকে— পরস্পর-সহযোগে বা পৃথকভাবে— দাঁড় করাবার চেষ্টাতেই করেছিলেন।
বৈদিক সংস্কৃত এবং পাণিনীয় সংস্কৃতের অনুধাবন-পদ্ধতি যেমন বিভিন্ন, তেমনই এই শেষ-দফা দেবভাষায় লেখায় যেহেতু ব্যাকরণ-পণ্ডিতদের দ্বারা অর্থবহ-চেষ্টাকৃত ব্যাকরণকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাবার অভিপ্রায় পষ্ট— তাই একে আলাদা একটা শ্রেণীতে ফেলে পাঠ বা বিচার করা উচিত বলে আমার ধারণা।
তপন সিংহের সেই ছবিটি আপনারা দেখেছেন? ‘এখনই’— তাতে চিন্ময় রায় জনৈক হিপি আঁতেলের ভূমিকায় অভিনয় করছেন; কফি হাউজে বসে আঁতেল চিত্রনাট্য লিখছে, ফরাসীতে। এক সহপাঠী প্রশ্ন করল, ‘ফরাসীতে কেন?’ আঁতেল বললে, ‘কারণ বাংলা ভাষায় সব কিছু এক্সপ্রেস করা যায় না। ও ভাষায় শুধু কাঁদা যায়।’ বৈষ্ণব পদাবলীর বিশেষ করে ছিঁচকাঁদুনে গানগুলি বাংলার সাহিত্যরসিকেরা খুব যত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পদাবলীকার পুরুষ ছিলেন; ‘মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী ফাটি যাবত ছাতিয়াঁ’ [১০]— তাঁর মনের আরশিতে শ্রীরাধার ছায়া পড়েছে সে ভালো কথা। কুঞ্জপথে অবলা কামিনী কী প্রকারে যাবে ঘনঘোর শ্রাবণের রাত্রিতে, পুরুষ পদাবলীকারের সেই দুশ্চিন্তা অনেক পরে লাঘব হয়েছে, যখন সে বুঝেছে ‘যাক পিয়া তুঁহু কী ভয় তাহারে?’ [১১] কিন্তু পশ্চিমে মীরাবাঈ যে গান লিখেছিলেন, সেও তো অনুরাগিনীর আলেখ্য। কই, সে তো দুর্বল নয়, তাঁর ভাষায় তো কোনো অসহায়তা নেই। অবলা রাজকুলবধূ কৃষ্ণপ্রেমের প্লাবনে খুঁজে পেয়েছে তার পরিচয়— পুরুষতান্ত্রিক স্ট্যাণ্ডার্ডের পরিভাষার বাইরে। গিরিধরনাগরের স্পর্শে তাঁর ত্রাস হয়ে উঠেছে অবজ্ঞা, সুর হয়েছে বিষাণ, বহিষ্কার হয়েছে অবকাশ। মীরাবাঈয়ের গানে রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করেছিলেন ‘দ্বিতীয় লিঙ্গে’র সেই আত্মঘোষণা— বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত যার যথাযথ পাঠোদ্ধার হয়ে ওঠেনি [১২]। শ্রীক্ষেত্রের বেলাভূমিতে কৃষ্ণবর্ণ সমুদ্র এক ‘পত্র’লেখিকা ‘স্ত্রী’র কাছে মীরাবাঈয়ের সেই আত্মপ্রকাশের স্বরূপটি বোধগম্য করে তুলেছিল।
কিন্তু মধ্যযুগের বাংলা পদ্যে সেই দার্ঢ্য কোথায়? ক্ষণজন্মা সমাজ-দর্পণধারিনী চন্দ্রাবতীর কথার পরিসর এখানে নেই। তাঁর ভাবের দার্ঢ্য দেখি, assertionএর নয়; শেষ অধ্যায়েও শ্রীরাম তাঁর কাব্যের নায়ক।
রাজ-অনুগ্রহের লালসায় বা উদ্ধত কৃপাণের ছায়ায় ধর্মান্তরিত হচ্ছে সহস্র ভারতবাসী; পরাধীন দেশে যেমন বিদেশী ভাষা শেখা শিক্ষার মাপদণ্ড বলে গণ্য হয়, তেমনই দেবভাষার শাস্ত্রসমূহকে মহাকালের বিস্মৃতির জন্য তুলে রেখে ভারতীয় পণ্ডিতদের মধ্যে ফার্সী শেখার চল হয়েছে। সেই সময়ে ব্রজভূমির গীতিকার সূরদাস লিখছেন—
কমলনয়ন কৌ ছাঁড়ি মহাতম ঔর দেব কৌ ধ্যাবৈ।
পরমগঙ্গকো ছাঁড়ি পিয়াসোঁ দুর্মতি কূপ খনাবৈ॥ [১৩]
ভাগবত-পঠিত সূরদাস মধুররসের ঝর্ণায় শঙ্করাচার্যের ‘গোবিন্দ’কে সম্পূর্ণ স্নান করিয়ে দেননি। কমলনয়নের উপাসনা নিয়ে সূরদাস ততোটাই গোঁড়া, ততোটাই দৃঢ়। কিন্তু বাঙালী পদকর্তা কোথাও লেখেননি, বা সালতানাৎ-এর যুগে লিখতে সাহস পাননি, ‘জিন্হ মধুকর আম্বুজরস চাখ্যৌ ক্যোঁ করীলফল খাবৈ?’
আমরা দেখতে পাব, শঙ্করাচার্য ও মহাপ্রভূর পরিক্রমায়, সূরদাস মীরাবাঈয়ের সঙ্গীতস্রোতে, মধ্যযুগে হিন্দুধর্মের যেই ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল, তার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উপাসনাই সর্বাধিক ব্যাপ্তিলাভ করেছিল। হয়ত কারণ এই যে, সে-সময়ের ভারতীয় জনমানসের কাছে এই দেবতার পরিপ্রেক্ষিত সবচেয়ে বেশী রিলেটেবল্ মনে হয়েছিল। উপাসক সেই পিপাসার্তা হ্লাদিনীর জায়গায় নিজেকে দেখতে পেয়েছিল, যে সকল দেহে-মনে-প্রাণে চায় তার প্রিয় কমলনয়নের রক্তঅধরস্পর্শে অন্তরদাহ জুড়াতে কিন্তু শাশুড়ি-ননদ-শাঁখা-পলার মতো রাজনীতি-শাসক-পরাধীনতা তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। হিন্দু হবার অপরাধে তাকে জিজ্য়া কর দিতে হয়, তার মন্দির যে-ক’টি অবশিষ্ট আছে তাতে কাঁসর বাজানো নিষিদ্ধ। ‘শূন্য মন্দিরে’ ‘হরি-বিন দিনরাতিয়াঁ’ কেমন করে সে অতিবাহিত করবে, মৈথিলী পদকর্তার মনে এই দুশ্চিন্তা ছিল [১০]। ‘কঠিন ক্রুর অক্রুর’ [১৪] এসে তার শ্যামকে মথুরায় নিয়ে গেছে তার চক্ষের আড়ালে। কিন্তু সে মথুরা যাবে কীভাবে? সেখানে আওরাঙজীব যে তার নন্দলালের খেলাঘর চাপা দিয়ে মসজিদ বানিয়ে রেখেছে!
বৈষ্ণব পদাবলী কেবল পদাবলীকারের হা-হুতাশ নয়, পদাবলীকারকে ক্রুদ্ধও হতে দেখেছি কখনো কখনো। শান্তস্বভাব বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে তারা গিয়ে ঘেরাও করেছিল নবদ্বীপের চাঁদকাজীর বাড়ী; চরিতামৃতে দেখছি নিমাই মিশ্র সেদিন দুর্নিবার ক্রোধে চাঁদকাজীকে হত্যা করতে উদ্যত। নিত্যানন্দ জোড়হাতে তাঁকে অনুরোধ করছেন, ‘দোহাই ষড়ভূজ, শান্ত হও। আজ আমার অনুরোধে তার প্রাণ দান কর। তুমি প্রেমময় কৃষ্ণের অবতার।’ [১৫] নিমাই মিশ্র শান্ত হলেন, নিত্যানন্দের স্থৈর্য্য নিয়ে। কিন্তু এ তো লীলা-মাত্র। যেমন কুরুক্ষেত্রের নরহোমের যজ্ঞবেদী প্রজ্বলিত করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ আর হলায়ুধ তার প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন বানপ্রস্থে, প্রভাসতীর্থের করুণাবারিতে সেই চিতাগ্নি সিঞ্চন করে [১৬]। এই যুগ্ম নির্ণয়ে তাঁরা দুজনেই জানতেন যে যুদ্ধ অনিবার্য।
মহাপ্রভু সঙ্গত কারণে সেই শেষবার ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। বৈষ্ণব ধর্মভাবের পরবর্তী বলিষ্ঠ লেখক কাজী নজরুল। প্রেমরসাপ্লুত রাসবিলাসীর স্তবেও তিনি একটিবার ভোলেন নি যে ইনিই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের কার্যকারণের ব্যাখ্যা করবেন যুদ্ধের অবসরে। রাজবন্দীর জবানবন্দীতে তিনি দোষ চাপিয়েছেন সেই বংশীবাদকের ঘাড়ে, যিনি তাঁর সর্বনেশে বাঁশীতে বিদ্রোহীকে উন্মত্ত করে তুলেছেন। বৈষ্ণব পরিবারে জন্মাননি বলে, স্বাভাবিক সংস্কারে শ্রীকৃষ্ণের মধুর রসে আবৃত হন্নি বলেই— কীর্ত্তন ও পদাবলী থেকে তার ভাব ও সুরবৈশিষ্ট্য আহরণ করেও নজরুল ছিলেন স্বতন্ত্র। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কাছে যুগান্তরের ঐতিহ্য ছিলেন না, ছিলেন যুগসন্ধির খড়্গপাণি।
গোবিন্দদাসের ক্ষেত্রেও বোধহয় তা সত্য। তাঁর লেখনীও দুই সংস্কৃতি-নদীর সঙ্গমের ঢেউতে অভিষিক্ত হয়েছিল। অভিসারিকা শ্রীরাধিকার ভঙ্গিমার বর্ণনায় তিনি লিখেছেন, ‘কুঞ্চিতকেশিনী নিরুপমবেশিনী রস-আবেশিনী ভঙ্গিনী রে। অধরসুরঙ্গিনী অঙ্গতরঙ্গিনী সঙ্গিনী নব নব রঙ্গিনী রে॥’ তিনিও শাক্ত পরিবারের ছেলে [১৭]; আর কে বলবে এই রূপে তিনি ব্রজবালিকা শ্যাম-হ্লাদিনী নাকি দেবী শ্যামাঙ্গীকে কল্পনা করেছেন?
আরেকজন শাক্ত কবির কথা না বললেই নয়, ভাষা যাঁর সময়োপযুক্ত ভাবপ্রকাশের বাধাস্বরূপ হয়নি। তিনি তাঁর উপাসিকাকে সত্যযুগের স্মৃতিমাত্র করে রাখেননি। মীরাবাঈয়ের কাছে গিরিধর যেমন মূর্ত হয়ে স্পর্শ্য হয়ে উঠেছিলেন, রামপ্রসাদের কাছেও কালী তাই। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া বাঁধা গ্রামবালিকার মধ্যে সাধক রামপ্রসাদ তাঁর আরাধ্যাকে দেখতে পেয়েছেন। তাই গান তাঁর অলংকার-সর্বস্ব হয়ে ওঠেনি, দেবীকে তিনি সহজ ভাষার সাবলীল ‘মাটির ঘর বাঁশের খুঁটি’র আঙিনায় ধরতে পেরেছিলেন। ভাষার শুদ্ধতা আবশ্যিক, কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তার প্রাণ। রামপ্রসাদ যদি ‘দে মা আমায় তবিলদারি’ না লিখে লিখতেন ‘রক্ষণভার’— তবে কী অঘটনটি ঘটত একবার ভাবুন। মুর্শিদাবাদের নবাবি থেকে চিৎপুরের বারোয়ারি পুজো— তাদের কারো ‘তহ্বিল্’-এ টান পড়ত না, শুধু গানটির অর্ধেক ভাব যেত চাপা পড়ে। রামপ্রসাদের যুগে কায়স্থ সমাজে— রামপ্রসাদ যে চাকরি করতেন, সেই চাকরিতে— ওটাই কথ্য ভাষা ছিল। দেবীকে বোঝাবার জন্য রামপ্রসাদকে নিজের পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে হয়নি, দেবী রামপ্রসাদের বাচনভঙ্গি বুঝে নিয়েছিলেন। তেমনি ‘তবিলদারি’ না বলে ‘তহ্বিলদারি’ উচ্চারণ করলে আরবির উচ্চারণে বাহাদুরী হয় বটে, কিন্তু রামপ্রসাদের ’পরে সেটা অপঘাত। আমাদের ভাষার দুর্দশার কারণ হল এই দুই। পণ্ডিতেরা ভাবেন তহ্বিলের প্রসঙ্গ-উত্থাপনে প্রেমের অভিব্যক্তির কৌলিন্য ক্ষয় হয়। হয় হয়ত— কিন্তু যে যুগে বায়োস্কোপ এসেছে, সে-যুগে বঙ্কিম রচনাবলী পড়ে শোনালে প্রেমিকাও যে ছেড়ে কথা কইবেন না। তাই ‘বাজার’ থেকে ফিরে কাব্য লেখার সময়ে বলব, ‘পসারক্ষেত্র থেকে এলুম’— এ দ্বিচারিতা বটে। আবার এই পণ্ডিতদের বিরুদ্ধাচারী দলের কাছে তহ্বিলটাই বড় কথা, ঐটিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে গানটির মূল্যে। এরা তহ্বিলের ব্যবহারিক রূপটা দেখে না, শুধু যাবনিক রূপটার ’পরেই এদের লোভ। ভাষার স্থাপত্য ভাঙতে এদের যত উৎসাহ, ভাঙা ইঁটগুলি দিয়ে গঠনমূলক কিছু করতে ততটা নয়। এরা বোঝে না, রামপ্রসাদের তহ্বিল মন্দিরের তহ্বিল, পলিটিক্যাল্ সমিতির কিংবা ভাঁটিশালার তহ্বিল নয়।
শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীর স্মৃতিচারণায় [১৮] এক সামান্য ঘটনা পড়েছিলাম, যার তাৎপর্য লেখক নিজেও বুঝতে পারেননি। ১৯০২ সালের প্রায় মাঝামাঝি— কলকাতা থেকে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে নৌকায় চড়ে শরচ্চন্দ্র বেলুড়ে এসেছেন; ঘাটে নেমে তিনি নৌকার ভাড়া মেটাচ্ছেন আর বিবেকানন্দ একটু এগিয়ে গেছেন। তখনকার বেলুড়— দিগন্তরেখা আজকের তুলনায় অনেকটাই নিচে; বিস্তৃত আকাশের তারা ছাড়া চরাচর জুড়ে অন্ধকার, ওপারে কলকাতার আলো স্তিমিত, এপারে বেলুড় মঠের ক্ষুদ্র লোকালয়। বিবেকানন্দ একা একা গুনগুন করছেন রামপ্রসাদের গান, ‘আশার আশা ভবে আসা আসা-মাত্র সার হল।’ তা যে শরচ্চন্দ্রের কর্ণগোচর হবে তা তিনি ভাবেননি। নির্জন অন্ধকারে একান্ত নিজের মনেই এই গান গাইছেন তিনি, যাঁর মর্ত্য-ছাঁচে আরব্ধ মহৎ কর্মযজ্ঞ তখন উপসংহারে, least of whose achievements বাংলা ভাষায় এমন গঠনমূলক কৃতিত্ব যার ভিত্তিতে যে-কেউ অমরত্বের প্রত্যাশা করতে পারে। এছাড়া ভবসাগরে তাঁর Noah’s Arcএর বর্ণনা বাহুল্য। অন্তরতমর কাছে তখনো সুখেষুবিগতস্পৃহঃ তাঁর স্বগতোক্তি— ‘আশার আশা ভবে আসা আসা-মাত্র সার হল।’
বাংলায় প্রথম চলিত ভাষার ব্যাপক ব্যবহার যাঁরা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে বিবেকানন্দ অন্যতম। সংস্কৃত সাহিত্যের ছন্দঝংকার আর উত্তর কলকাতার প্রাকৃতভাষা মিলিত হয়েছিল তাঁর লেখনীতে। যে সময়কালে তিনি মেধাবী ছাত্রের ক্ষুদ্র আলোকিত বৃত্ত থেকে অন্তর্হিত হয়ে বাংলাদেশের পটভূমিতে অপরিচয়ের পর্দা টেনে পরবর্তীকালে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করবেন বৃহত্তর কস্মোপলিটান বৃত্তে— তখনও রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালের ছায়া অতিক্রম করেননি; তাঁর কৈশোরের পদাবলীর মুদ্রণের উৎসর্গে লিখছেন, ‘ভানুসিংহের কবিতাগুলি ছাপাইতে তুমি আমাকে অনেকবার অনুরোধ করিয়াছিলে। তখন সে অনুরোধ পালন করি নাই। আজ ছাপাইয়াছি, আজ তুমি দেখিতে পাইলে না।’ [১১] ‘কুমারসম্ভবের কবি’র মালিনীর মত কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথের প্রথম পাঠিকা; জোড়াসাঁকোর বাগানে তাঁর কন্ঠে প্রথম গীত হয়েছিল বালক রবীন্দ্রনাথের সেই কালোত্তীর্ণ পদাবলী— বিদ্যাপতির ছাঁচে, বিহারীলালকে উপেক্ষা করে, রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষায়— ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’।
বছরখানেক আগে, ফিনল্যাণ্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের কাছে একটি গাণিতিক সমস্যা নিয়ে ইমেল পাঠিয়েছিলাম। আত্মপরিচয়ে এটুকু লিখেছিলাম, যে আমি ভারতবর্ষের একটি রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠানের স্নাতক। তিনি আমার চিঠির উত্তর দিয়ে শেষে লিখেছিলেন, ‘আচ্ছা, তুমি তো ভারতীয়। তুমি কি বেঙ্গলি ভাষা জান, বা বেঙ্গলে গেছ? ঐ ভাষার একজন কবির লেখা আমি ইংরাজী আর ফিনিশ অনুবাদে পড়েছি; ওঁর লেখা আমায় ভীষণভাবে move করে।’ তাঁকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে জানিয়েছিলাম যে রবীন্দ্রনাথ আমার মাতৃভাষাতেই লিখতেন।
রেফারেন্স
[১] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষের কবিতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ কলিকাতা, ভাদ্র ১৩৩৬।
[২] ‘মানিষাদপ্রতিষ্ঠাংত্বমগমঃশাশ্বতীঃসমাঃ। যৎক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃকামমোহিতম্॥’ বাল্মীকি রামায়ণ ১-২-১৫।
[৩] হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ্ (দ্বিতীয় মুদ্রণ), ভাদ্র ১৩৫৮।
[৪] হর্ষচরিত, উচ্ছ্বাস ৭।
[৫] https://web.archive.org/web/20140722175619/http://vhp.org/shriram-janmabhumi-mukti-andolan/mov1-shriram-janmabhumi-mukti-andolan-2 [03 November 1990]
[৬] জয়দেব গোস্বামী, গীতগোবিন্দম্, গুরুদাস চত্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, দ্বিতীয় সংস্করণ। গীত-১।
[৭] https://www.sahapedia.org/bonbibi-r-palagaan-tradition-history-and-performance#_edn3
[৮] মহিষাসুরমর্দিনীস্তোত্রম্।
[৯] জয়দেব গোস্বামী, গীতগোবিন্দম্, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, দ্বিতীয় সংস্করণ। গীত-২।
[১০] বিদ্যাপতি।
[১১] ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড, তৃতীয় সংস্করণ কার্তিক ১৩৪৮, বিশ্বভারতী।
[১২] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গল্পগুচ্ছ তৃতীয় খণ্ড, স্ত্রীর পত্র, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ কলিকাতা, আষাঢ় ১৩৭৬।
[১৩] সুর-সাগর।
[১৪] মীরাবাঈ।
[১৫] কালকূট, জ্যোতির্ময় শ্রীচৈতন্য, রীডার্স কর্নার, ১৩৬৬।
[১৬] মহাভারত, উদ্যোগপর্ব।
[১৭] কৃষ্ণদাস কবিরাজ, চৈতন্য চরিতামৃত, আদিলীলা ১০-৭৮,৭৯।
[১৮] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, নবম খন্ড: শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী, স্বামি-শিষ্য সংবাদ, ৪৫, উদ্বোধন কার্যালয় কলিকাতা।
Comments
Post a Comment