হারা-নিধি
আমার রাতের তন্দ্রা ভাঙল রে ঐ হু-হু করা প্রভাত-বায়ে
আধো আলোয় মিলিয়ে যাওয়া মলীন তারার আলতা-পায়ে।
সজল চোখের বেদন-হাসি
রিক্ত শাখার শিউলি-রাশি,
তারার দেশে অঙ্গনারা খুলে রাখে চূড়ামণি।
মিথ্যে হল স্বপ্নেরা আর কুজ্ঝটিকার আবরণি॥
ক্রন্দসী কোন্ তান ধরে ঐ ঊষা তাহার সঙ্গোপনে,
গোপন ব্যথার উতরোলে হিয়া কাঁপায় ক্ষণে ক্ষণে।
বুঝি বা কোন্ না-পাওয়া সুখে
খুঁজে মরে সে গগন-বুকে
অরুণ-কর্ণ মলীন মুখে হার মানে সে ক্লান্ত কায়ে
স্বপ্ন তাহার জুঁইয়ের মত ঝরে গাছের সিক্ত পায়ে।
ব্যথা-নিশির ভাঙল শিকল, বিকল হল আঁধার-ঘেরা
স্বপন-তারে সুর তোলা ঐ অস্ত-দীপের গগন চেরা।
রাত ফুরালে ভোরের তারা সাদা আলোয় হারায় কায়,
নীল মেঘেদের আর্দ্রতাতে অশ্রু-আঁখির মিলল সায়।
বুকের গভীর তলে ও কোন্ সুপ্ত ছিল অধীর পিয়াস
অন্ধকারের গন্ধে তারই উঠল ফুটে অবাক্ কী আশ!
আপন চেতন তন্ন তন্ন ছন্নছাড়া এ কোন্ দাবী
অট্টহাসে আছড়ে পড়ে তমালমূলে ফাগ গুলাবী।
ভাবতে যাহা হয় না সাহস, লিখতে যাহা আঙুল কাঁপে
কল্পনাতে অধর-রেখায় হাত বোলানো সে সন্তাপে।
যে তারারা নীরব ছিল চাঁদের ধ্বজার মলীন ছায়ায়
সন্ধ্যাবেলার কোলাহলে, এ কোন্ দারুণ প্রকাশ তার হায়!
যে মুখখানি মর্মতলে বহু-যতন আচ্ছাদনে
সুপ্ত ছিল চেতন-কারায়, উঠল ভেসে আজ স্বপনে!
বক্ষতলে পোষ-না-মানা ইচ্ছেরা উঠল উচ্ছাসি
সজল-কাজল লেপ্টে গালে বিদায়-তারার বেদন হাসি—
ব্যথাতুরের গোপন অভিযোগের নীরব দৃষ্টি তার
বে-দরদী দিবসতাপে বাষ্পে কাঁপে অধরধার॥
সুদূর অমরাবতীর সে কোন্ দেবদুহিতার অঙ্গরাগে—
দুধে-আলতা চিবুক তাহার, ধবল কপোল সলাজ ফাগে;
জোড়া-বাঁধন গুল্ম-বাহুর তাহার পরে ন্যস্ত চিবুক
হরিণ চোখ সে মেঘের ওপার— সহাস অধর, ক্রন্দসী বুক।
বুঝি বা ওই মেঘের পারে ধরার রাঙামাটীর তরে
নির্বাক এক অবুঝ বেদন হৃদয় তার মথিত করে।
কোন্ জনমে কোন্ নিশীথের কোন্ স্বপনের অবসরে
আমের কুঞ্জে আঁধার ছায়ায় তাকিয়েছিল সোহাগ-ভরে
প্রিয়ের সপ্রেম মুখের পানে, মৃণাল-ভূজের বাঁধন ঘেরি
গ্রীবা তাহার জড়িয়ে কাঁধে রাখতে মাথা প্রভাতভেরী
উঠেছিল বেজে ও কোন্ নাকাড়া ভৈরবীর তানে
স্বপনলোকের সুখের স্রোতে তপন-আলোর নিঠুর বাণে।
স্বপ্ন সেই অদৃশ্য তারে বাঁধা দুটি হৃদয়বীণায়
এক সুর গুঞ্জরি ওঠে রজনীঘোর বিরামহীনায়।
সূর্য তায় ছিন্ন করে, রোহিণী দেয় ললাট ছেনে,
শিউলি তার অধীর বুকে ঝরে সখীর আদর হেনে।
আজ বুঝি তার অন্য পারের যুগান্তরের সখার চোখে
তাহার স্বপনস্মৃতির ছবি উঠল ভেসে মর্ত্যলোকে।
স্বপন ভেঙে উঠে দেখি তারারা ম্লান তিক্ত হেসে
বলছে, ‘মশাই, এতোদিনে পড়ল মনে ঘুমের দেশে?’
শিউলিফুল ঝরল ভূমে, বলল, ‘আজি এতোদিনে
রুদ্ধ বারি আঁখির পাতে ঝরল এবার বিরাম বিনে।
এবার বুঝি রাতে রাতে দুজনাকে খুঁজবে দুজন
মধুর সোমসুধার ধারায় ভরবে ইন্দ্রজালে ভূবন।’
আবার কোন্ সে অলক্ষণের স্বপ্ন-জাগরণের ক্ষণে
দুইজনারই তন্দ্রা-আবেশ মিলবে মধুর এক স্বপনে;
এক চেতনার আলোড়নে দুইটি তরুণ আকুল হৃদে
গোপন ব্যথার অমিল কাঁটা অপূর্ণতার রইবে বিঁধে॥
আধো আলোয় মিলিয়ে যাওয়া মলীন তারার আলতা-পায়ে।
সজল চোখের বেদন-হাসি
রিক্ত শাখার শিউলি-রাশি,
তারার দেশে অঙ্গনারা খুলে রাখে চূড়ামণি।
মিথ্যে হল স্বপ্নেরা আর কুজ্ঝটিকার আবরণি॥
ক্রন্দসী কোন্ তান ধরে ঐ ঊষা তাহার সঙ্গোপনে,
গোপন ব্যথার উতরোলে হিয়া কাঁপায় ক্ষণে ক্ষণে।
বুঝি বা কোন্ না-পাওয়া সুখে
খুঁজে মরে সে গগন-বুকে
অরুণ-কর্ণ মলীন মুখে হার মানে সে ক্লান্ত কায়ে
স্বপ্ন তাহার জুঁইয়ের মত ঝরে গাছের সিক্ত পায়ে।
ব্যথা-নিশির ভাঙল শিকল, বিকল হল আঁধার-ঘেরা
স্বপন-তারে সুর তোলা ঐ অস্ত-দীপের গগন চেরা।
রাত ফুরালে ভোরের তারা সাদা আলোয় হারায় কায়,
নীল মেঘেদের আর্দ্রতাতে অশ্রু-আঁখির মিলল সায়।
বুকের গভীর তলে ও কোন্ সুপ্ত ছিল অধীর পিয়াস
অন্ধকারের গন্ধে তারই উঠল ফুটে অবাক্ কী আশ!
আপন চেতন তন্ন তন্ন ছন্নছাড়া এ কোন্ দাবী
অট্টহাসে আছড়ে পড়ে তমালমূলে ফাগ গুলাবী।
ভাবতে যাহা হয় না সাহস, লিখতে যাহা আঙুল কাঁপে
কল্পনাতে অধর-রেখায় হাত বোলানো সে সন্তাপে।
যে তারারা নীরব ছিল চাঁদের ধ্বজার মলীন ছায়ায়
সন্ধ্যাবেলার কোলাহলে, এ কোন্ দারুণ প্রকাশ তার হায়!
যে মুখখানি মর্মতলে বহু-যতন আচ্ছাদনে
সুপ্ত ছিল চেতন-কারায়, উঠল ভেসে আজ স্বপনে!
বক্ষতলে পোষ-না-মানা ইচ্ছেরা উঠল উচ্ছাসি
সজল-কাজল লেপ্টে গালে বিদায়-তারার বেদন হাসি—
ব্যথাতুরের গোপন অভিযোগের নীরব দৃষ্টি তার
বে-দরদী দিবসতাপে বাষ্পে কাঁপে অধরধার॥
সুদূর অমরাবতীর সে কোন্ দেবদুহিতার অঙ্গরাগে—
দুধে-আলতা চিবুক তাহার, ধবল কপোল সলাজ ফাগে;
জোড়া-বাঁধন গুল্ম-বাহুর তাহার পরে ন্যস্ত চিবুক
হরিণ চোখ সে মেঘের ওপার— সহাস অধর, ক্রন্দসী বুক।
বুঝি বা ওই মেঘের পারে ধরার রাঙামাটীর তরে
নির্বাক এক অবুঝ বেদন হৃদয় তার মথিত করে।
কোন্ জনমে কোন্ নিশীথের কোন্ স্বপনের অবসরে
আমের কুঞ্জে আঁধার ছায়ায় তাকিয়েছিল সোহাগ-ভরে
প্রিয়ের সপ্রেম মুখের পানে, মৃণাল-ভূজের বাঁধন ঘেরি
গ্রীবা তাহার জড়িয়ে কাঁধে রাখতে মাথা প্রভাতভেরী
উঠেছিল বেজে ও কোন্ নাকাড়া ভৈরবীর তানে
স্বপনলোকের সুখের স্রোতে তপন-আলোর নিঠুর বাণে।
স্বপ্ন সেই অদৃশ্য তারে বাঁধা দুটি হৃদয়বীণায়
এক সুর গুঞ্জরি ওঠে রজনীঘোর বিরামহীনায়।
সূর্য তায় ছিন্ন করে, রোহিণী দেয় ললাট ছেনে,
শিউলি তার অধীর বুকে ঝরে সখীর আদর হেনে।
আজ বুঝি তার অন্য পারের যুগান্তরের সখার চোখে
তাহার স্বপনস্মৃতির ছবি উঠল ভেসে মর্ত্যলোকে।
স্বপন ভেঙে উঠে দেখি তারারা ম্লান তিক্ত হেসে
বলছে, ‘মশাই, এতোদিনে পড়ল মনে ঘুমের দেশে?’
শিউলিফুল ঝরল ভূমে, বলল, ‘আজি এতোদিনে
রুদ্ধ বারি আঁখির পাতে ঝরল এবার বিরাম বিনে।
এবার বুঝি রাতে রাতে দুজনাকে খুঁজবে দুজন
মধুর সোমসুধার ধারায় ভরবে ইন্দ্রজালে ভূবন।’
আবার কোন্ সে অলক্ষণের স্বপ্ন-জাগরণের ক্ষণে
দুইজনারই তন্দ্রা-আবেশ মিলবে মধুর এক স্বপনে;
এক চেতনার আলোড়নে দুইটি তরুণ আকুল হৃদে
গোপন ব্যথার অমিল কাঁটা অপূর্ণতার রইবে বিঁধে॥
Comments
Post a Comment