নালন্দা



ট্রেনে চড়ে নালন্দায় যেতে হলে এখন বখতিয়ারপুর স্টেশনে নামতে হয়। জ্ঞানতীর্থ নালন্দা জ্বলে উঠেছিল এই বখতিয়ার খিলজির হাতে; ছয়মাস ধরে জ্বলেছিল তার গ্রন্থাগার; তারপরে সেই আগুন নেবার সাথে সাথে ভারতবর্ষের আকাশে নেমে এসেছিল অর্ধ-সহস্রাব্দের ঘুটঘুট্টে অন্ধকার— এখন সেই রাত্রি ধীরে ধীরে ভোর হচ্ছে হয়ত। নালন্দায় যেতে হলে বখতিয়ারপুর স্টেশনে নামতে হয়…

কিছু রেফারেন্স্ দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে। নীচে পংক্তি-সংখ্যার সাথে তার হদিশ দেওয়া রইল।

 

পাতা শত শত পুড়ে ছাই হল হস্তাক্ষর-স্তূপ,

যে-ঘরে জ্বলত জ্ঞানের বাতি, তা অতল অন্ধকূপ।

লণ্ডভণ্ড খণ্ড খণ্ড রণ-জয়া নির্ঘণ্ট;

সীবলী-জাতক হাতে ভিক্ষুণী পিয়েছে বিষ আকণ্ঠ।

নবীন শ্রমণ গোঁফের আভাস রক্ত-কর্দমাক্ত—

তাহারই রক্তে ভিজে একাকার, যে পুঁথি আগলে রাখত!

চীন-তিব্বত-ভারত কাব্য মেঘবালিকা দূতী,

যক্ষপ্রিয়ার রোদান-মাখা ভিজে কালি-ওঠা পুঁথি।

তথাগতর অশথছায়া আলো-করা বোধি-বাণী

লেলিহান শিখা হিংস্র আগুনে পুড়ে গিয়ে শতখানি।

তমসাতীরের ক্রৌঞ্চবিরহী দুহিতাবৎসল সে

দস্যুর খোঁজা প্রেমের ভূবন গেছে সে-আগুনে ঝলসে।

গেছে ব্যাকরণ পিঙ্গল-ভাস, ছন্দহীন এক জরা—

অতঃপর শুধু প্রাকৃত কথায় লাঞ্ছিত হবে ধরা।

পুড়ে গেল বেদ পরমশূন্যতত্ত্ব ও চিরপূর্ণ,

আছড়ে পড়ল দ্বিতল আবাস শতশবাস্থি চূর্ণ।

হৃতা প্রব্রাজিকা বুদ্ধচরণে সন্ধ্যাপ্রদীপ নেবা;

ভাঙা স্তূপ-’পরে পিশাচের মত ছিন্ন শিরের সেবা;

অনল উত্তাপে পোড়া বই কাঁপে, মন্দির অবরুদ্ধা;

জ্ঞানের সাগরে রাহু-ছায়া পড়ে, বীণাপাণি সংক্ষুব্ধা।

জ্বলে কণদের গভীর তত্ত্ব, ব্রহ্মগুপ্ত জ্বলে,

গণিত শোণিতে হ’ল আবরিত, শাস্ত্র অস্তাচলে।

ছেঁড়া পাতা ক’টা আধা অক্ষর— আবহমানের মর্ম

মঠের একেক প্রচীর ধ্বসিয়া পোড়ে বেদান্তধর্ম॥







৩— মহাভারত।
সঞ্জয়-কর্তৃক মূল যুদ্ধকথনের নাম ‘জয়া’। ৪— মহাজনক জাতক। সীবলী মহাজানক-জন্মে বোধিসত্বর প্রেমের প্রতি দাবী নিয়ে জন্মান্তরে যশোধরা-রূপে ভগবান তথাগতর অর্ধাঙ্গিণী রূপ পরিগ্ৰহ করেছিলেন। ৭, ৮— মেঘদূত। চৈনিক কাব্যে মেঘের হাতে পত্র পাঠানোর ধারা বহু প্রাচীন। সম্ভবতঃ ফা-হিয়েনের মাধ্যমে কালিদাস তার সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১১, ১২— বাল্মীকি রামায়ণ। তমসানদীর তীরে কবি বাল্মীকির আশ্রম ছিল। পূর্বাশ্রমে দস্যু ক্রৌঞ্চবিলাপে অভিভূত হয়ে প্রথম কাব্য রচনা করেছিলেন। ১৫— যজুর্বেদ। গাণিতিক শূন্য ও অসীমতার ধারণা, অসীমতা পরমাত্মাকে বোঝাতে ব্যবহৃত। ২১— ব্রহ্মস্ফূটসিদ্ধান্ত, বৈশেষিকাসূত্র। ব্রহ্মগুপ্ত গণিতজ্ঞ, কণদ আণবিক পদার্থবিদ্যার স্থপতি।

Comments

Popular Posts