অবধূূতা
কোকিল রচে এমনি ষড়যন্ত্র, কী বলি, শোন—
মধুর স্বরের ডাকে তাহার কানন উচাটন।
এলোমেলো দখিন বায়ে
খসে খোঁপা, ফুল লুটায়;
ভ্রমর ভাসে বে-সুরে তায়, মাতাল পলাশ বন;
সবে মিলে কুলের বধূর টানে আঁচল-কোণ॥
আনমনে ডুবালে জলে গাগরী ভাসায় নদী
যেমন ছোঁ উড়নিতে শ্যাম মারত পথ অবরোধি’ ।
পলাশ-ধোয়া রৌদ্র ঢালে
রক্তরাগ ঐ অবুঝ গালে,
ভাসিয়ে কূল নয়নদুটিও ভাসায় নিরবধি।
পলাশফুলের পাপড়ি খসে ঠোঁট ছুঁয়ে যায় যদি॥
আঙুলে হিম পরশ লাগে কৃষ্ণ সে-স্রোত ছুঁতে,
রোদ্দুর এসে কড়া নাড়ে গুণ্ঠনের আব্রুতে।
যেমন শ্যামের বেণুর বোলে
দুল্ত হৃদয় আকুল দোলে,
আঁচল খসায় দখিন হাওয়ায় আঁখির পাতায় ফুঁ-তে;
কাঁপন লাগে দুরুদুরু পঞ্জরে ডমরুতে॥
দোলায় দোলনচাঁপার কুঁড়ি কামরাঙা আমপাতা,
আকুল রাধার হিয়ায় টুকরো স্মৃতির মালা গাঁথা।
রাসের রাতে কৃষ্ণচূড়া
মেঘ-ছায়াতে তন্দ্রাতুরা,
জুড়ায় হিয়া হিম-পরশে, এলানো তার মাথা
বংশীবটের আঁধার গায়ে— বনজ্যোৎস্নায়-স্নাতা॥
শ্যামের বাঁশি ফিস্ফিসে ছোঁয়, ঝুমকো দোলায় কানে,
আকুল হৃদয় গাঢ় শ্বাসের ঘূর্ণি ভাসায় বানে।
চাঁদের প্রদীপ নিবিয়ে দেয়া
আঁধার স্রোতে ভাসায় খেয়া
একলা রাধা ডুব-চেতনে কালিদহের টানে—
শ্যামের চোখের আরশি ছায়ার দুরূহ সন্ধানে॥
Comments
Post a Comment