১৯৯২ অযোধ্যা অভিযানের সদস্যদের প্রতি




শয়ে শয়ে বছর ধরে মাঝগগনে লেপ্‌ছে কালি—
কোত্থেকে সব দামাল ছেলে উঠ্‌লি গেয়ে রাম-পাঁচালী।
দৃঢ় পায়ে গুঁড়িয়ে দিলি তুর্ক-মোগলের গোঁয়ার্তুমি,
রক্তমাখা ললাট তোদের রাঙাল রাম-জন্মভূমি।
অযোধ্যার ঐ পাঁচিল-ঘেরা ছোট্ট বাড়ীর চাতালখানি
পা ছুঁয়েছে সে-দেবশিশুর, রাজার ছেলের চারণবাণী—
ব্যস্, ওটুকুই। জন্মভূমি— রামের, সীতার, আমার-তোদের
আসমুদ্র ভারতভূমি, স্পর্শ-মাখা মিঠে রোদের।
সকল দেশে উঠল ধ্বনি’ তোদের গানের রণন-স্বরে,
গৈরিক ঐ কেতন প্রণাম করলে সবাই যুক্তকরে॥

তোরা রে ভাই ঈশান-কোণে ঝোড়ো মেঘের ধূম্র-আঁধার,
পথে তোদের পরখ করে নেবেই আগুন, হাজার বাধার।
সুখে থাকা বিচক্ষণের দুপুর-ঘুমে ব্যাঘাত আনা
তোরা এসে নামলি ধুলায়, কালবোশেখী ঝাপ্‌টে ডানা।
ওদের তোরা বিব্রত খুব করেছিস্, ভাই, হঠকারী;
হানবে আঘাত সপ্তরথীতে আক্রমণ এলোপাথারী।
ক্রূশে বেঁধা যীশুর মত ঐটে প্রেমের প্রতিদানে
নিবি তোরা দুইটি বাহু বাড়িয়ে আততায়ীর পানে।
কাঁটার মুকুট না পরলি ত আল্‌সে সে যে জমিদারি—
ক্ষত্রশিশুর ভূষণ— আঘাত, দেবশিশুদের কৃপাণধারই।
দমিয়ে দেবে অসুন্দরের অপমানের খেউড়-গীতে?
কণ্ঠ তোদের তোল্ সগর্জ সাগর-ঢেউয়ের বিপরীতে॥

মায়ের পায়ের একটি শিকল খুলতে যদি যায় রে প্রাণ—
করবি মনে, ঐটে তোদের ত্রিলোকখ্যাতিরই ফর্মান।
দে গুঁড়িয়ে মরুদস্যুর দানবীয় দম্ভ-মিনার,
আবার উঠুক্ অযোধ্যার ঐ উঠানে সুর রুদ্রবীণার।
সন্ধ্যাবেলায় ঋষিবালক আবার বুঝি সামের গানে
অসীম-কোলে হাত বাড়াবে বেদ-স্তোত্রের অভিমানে।
অশোকবনের অরুণিমা ছোঁবে মৈথিলীর কপোল,
তমসাতীর-তীর্থে হরিণ ফিরবে ছুটে ছন্দচপল।
তুর্ক-মোগলের বন্দিনী মা অনেক যুগ তারার পানে
চেয়ে চেয়ে দিন গুণেছেন, উছলি বারি দুই-নয়ানে।
আজকে তোরা দামাল ছেলে বে-সামাল রণোচ্ছাসে
গুঁড়িয়ে দিলি অসুরপুরের বন্দীশালার শেকল-ত্রাসে।
ধনুক-ভাঙা পণ যে রামের তার বুঝি রে করিস্ পূজা? 
অওধ-আঙিনাতে সীতা সহাস অধর, মৃণালভূজা—
রঘুবীরের চরণরেখায় জমেছিল কালের ধূলি,
রাঙা চরণ-পাদুকাটি নিলি তোরা মাথায় তুলি॥

Comments

Popular Posts