Vishnu iconography
শিবের ধনুকের নাম পিণাক, অর্জুনের ধনুকের নাম গাণ্ডীব। শ্রীকৃষ্ণের ধনুকের নাম কী? এটা সচরাচর কেউ বলতে পারে না; শ্রীকৃষ্ণের ধনুকের নাম শার্ঙ্গ। মহিষের দীর্ঘ বাঁকানো শিঙ দিয়ে সেই ধনুকের নির্মাণ। শ্রীকৃষ্ণের গদার নাম? কৌমুদকী। কৌমুদকী আসলে পদ্ম; নারায়ণের ডান-হাতে যা চারুদল ফুল হয়ে হাসে, তারই বামহস্তের নিক্ষেপ প্রলয়ঙ্করী কৌমুদকী। নারায়ণের অঙ্গে তা প্রসাধনের উপকরণ মাত্র। শ্রীকৃষ্ণের চক্রের নাম সুদর্শন সেই কথা বোধ হয় আর কারও জানতে বাকী নেই। চক্র সময়ের প্রতীক; বৌদ্ধযুগে অষ্টার চক্র বা সারনাথে সম্রাট চণ্ডাশোকের চতুর্বিংশার চক্র— তাও সময়েরই প্রতীক। যে যুগে সময়ের যে পরিমাপ প্রচলিত ছিল তার নিরিখে। বুদ্ধের প্রথম বক্তৃতাকে বলে মহাকালচক্রপ্রবর্তন, ধর্মচক্রের পুনঃঘূর্ণনের সূচনা। অর্জুন যখন গাণ্ডীব ফেলে দিয়েছিল যুদ্ধের আগে, তখন সময় ও ধর্মের চক্র রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রহর অথবা দণ্ড, যুগ অথবা মন্বন্তর— সকলই ঘুর্ণিত হয় শ্রীবিষ্ণুর দক্ষিণহস্তের তর্জনী নির্দেশে। তাঁর তর্জনীকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের আবর্তন চলেছে অনন্তকাল ধরে অক্লান্ত।
দানবরাজ বলীকে তার সর্বস্ব খোয়াতে হয়েছিল কারণ সেই মুহুর্তে সে আবিষ্কার করেছিল যে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল কোথাও এমন এক-চিলতে জায়গা নেই যেখানে সর্বগের পায়ের ছায়া পড়ে না, বিশ্বলোকে এমন কিছুই নেই যা শ্রীবিষ্ণুর অধিকৃত নয়। (ভাগবত দ্রষ্টব্য) বলী নিজে নিঃস্ব, বা পূর্ণ হলে তা বিষ্ণুর মধ্যে দিয়েই। কিছুই তার নিজের নয় আবার সবই তার নিজের, তাই বিলিয়ে দেবার অধিকার তার আছে। ত্রিলোকের অধিপতি সে, আর ত্রিলোকের অধিপতি বিষ্ণু। অভিন্নাত্মা, আবার আরাধ্য।
গাঢ়োয়ালীদের মধ্যে বিয়ের সময়ে শুনেছি একটা প্রথা আছে, মেয়ের বাবা জামাইকে একটা পাহাড় দিয়ে দেয়। তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে বলল, ‘ঐ পাহাড়টা আজ থেকে তোমার।’ সত্যিই কিন্তু পাহাড়ের মালিক সে হয় না; পাহাড়ের ত আর দলিল হয় না। পাখি, পশু, ভ্রমরের পথ সেখানে রুধবে কে? আর মানুষও ত প্রকৃতির সন্তান, তাই মানুষের যাতায়াতও অব্যহত থাকে। আবার জামাই নিজেও সেই পাহাড়ের থেকে ফল-ওষধি-বাতাস যা চাই পেতে পারে। মানুষের একার প্রয়োজন প্রকৃতির বিশালতার সামনে এত কম, যে সেখানে কিছুই তার ‘অধিকার’ করার প্রয়োজন হয় না, যদি না সে ক্ষমতা-আস্ফালন করতে চায়। আমরা যারা নগরে ঘিঞ্জি-পরিবেশে জমি-বাড়ি-দালানের ভাগাভাগি খেয়োখেয়ি করি, আমরা গাঢ়োয়ালীদের উদাহরণের মাধ্যমে বলীর উপলব্ধি হয়ত কিঞ্চিৎ বুঝতে পারব।
Comments
Post a Comment